ঢাকা , শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ , ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সরকার সংস্কার কমিশন করলেও নদীর ক্ষেত্রে প্রতিফলন নেই-আনু মুহাম্মদ বাড্ডায় কিশোর গ্যাংয়ের সংঘর্ষে নিহত ১ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিপুল খরচেও কমানো যাচ্ছে না নানামুখী আতঙ্ক রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা সেই শিশু আছিয়া না ফেরার দেশে ধর্ষণে আতঙ্ক -উদ্বেগ ভারতকে অযাচিত বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে বলল ঢাকা প্রধান উপদেষ্টা চীন সফরে যাচ্ছেন ২৬ মার্চ সালমান এফ রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা খরায় পুড়ছে চা-বাগান উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা ইফতারিতে দই-চিড়ার জাদু একরাতে দু’জনকে কুপিয়ে হত্যা এলাকায় আতঙ্ক স্বাভাবিক নিত্যপণ্যের বাজার, সংকট সয়াবিনে মামলা থেকে স্বামীর নাম বাদ দেয়ার কথা বলে স্ত্রীকে ধর্ষণ ছেঁউড়িয়ায় শুরু লালন স্মরণোৎসব দোহাজারীতে বাসচাপায় ৩ জন নিহত হেনস্তার পর ছাত্রীকে ফেলে দিলো দুর্বৃত্তরা ৫৬০ মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ভ্যাট দেয় না বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরনের কাপড় টিভি ফ্রিজ খাট টাকা সব পুড়ে শেষ বস্তিতে আগুন
# যুগপৎ কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনে বিএনপি # বিরোধীদের আন্দোলন প্রতিরোধের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোডাউন নিয়ে ব্যাস্ত আ’লীগ # আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণে পরামর্শ নিতে করা হচ্ছে ধারাবাহিক বৈঠক

ঈদের পর মাঠে নামছে বিএনপি-আ’লীগ

  • আপলোড সময় : ১৩-০৬-২০২৪ ০৮:১০:১৪ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৪-০৬-২০২৪ ০১:৩৬:২৮ অপরাহ্ন
ঈদের পর মাঠে নামছে বিএনপি-আ’লীগ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি মূল্যায়নে ঈদুল আজহার পর যুগপৎ আন্দোলনে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দল বিএনপি। সেই আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণে পরামর্শ নিতে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে দলটি। তবে বিএনপির গতিবিধির উপর নজর রাখছে টানা চার মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ। একইসঙ্গে দলের ২৩জন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বড় শোডাউন দিতে ব্যস্ত সময় পার করছে সরকারি দল। সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির আন্দোলন ও ঈদের মধ্যে একটা অদৃশ্য যোগসূত্র গড়ে উঠেছে। ২০১৪ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাশাপাশি দলটির অন্য শীর্ষ নেতারা ঈদের পরে আন্দোলনের হুঙ্কার দিয়েছেন বহুবার। এ নিয়ে অনেক তীর্যক মন্তব্যও শুনতে হয়েছে বিএনপিকে। এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ৬ মাস পর সরকার পতনের আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারে দলটি। এ লক্ষ্যে রাজপথে কর্মসূচি নিয়ে ‘হার্ডলাইনে’ যাওয়ার ইঙ্গিতও দিচ্ছে বিএনপি। প্রায় ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনীতিক দল বিএনপি বলছে, সরকারের বিরুদ্ধে সরব দলগুলোকে নিয়ে ঈদের পর এক দফার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে এবার হাকডাক দিয়ে নয়, পরিকল্পিতভাবে জনইস্যু নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনে যেতে চাই দলটি। মূলত ১৭ জুন ঈদুল আজহার পরে জুলাই মাসের মাঝামাঝি আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। এরইমধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, যারা আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঈদের পরে আন্দোলন আরও বেগবান করা হবে।
ঈদের পর আন্দোলন বেগবান হবে: আন্দোলন চলছে, আন্দোলন চলবে, শিগগিরই আমাদের আন্দোলন আরও বেগবান হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ১২ জুন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির উদ্যোগে ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংকট-উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকার দেশের সবকিছু ধ্বংস করে ফেলেছে। আমাদের সুর একটাই এই সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আন্দোলন চলছে, আন্দোলন চলবে, শিগগিরই আমাদের আন্দোলন আরও বেগবান হবে। আমরা সব দল একত্রিত হতে পেরেছি। কীভাবে এই সরকারকে সরাতে পারি, কীভাবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে পারি, সেই লক্ষ্যেই আমরা সংগ্রাম করছি। এসময় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করি। বিশেষ করে তরুণ যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। কারণ এই সংগ্রাম শুধু বিএনপির একা নয়। এই সংগ্রাম দেশের স্বাধীনতা-গণতন্ত্রকে রক্ষা করার সংগ্রাম। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটাই, এই সরকারকে সরিয়ে দেয়া। মানুষ জেগে উঠেছে। আমরা হয়তো তাদের জেগে ওঠাকে কাজে লাগিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারি নাই। তবে নতুন সূর্যোদয় হবেই, সেখানে অবশ্যই আমাদের পৌঁছাতে হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকার আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে নানাভাবে চেষ্টা করছে। তাই এখনই কিছু বলা মুশকিল। তবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে দাবি আদায়ের যুগপৎ আন্দোলন এক দফা দাবিতে রূপ দেওয়া হবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে কর্মসূচি চূড়ান্ত করব। এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রায় ৬ মাসের বেশি চুপচাপ থাকার পরে নতুন করে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি। সরকারের নতুন বাজেট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি সংকটসহ নানা সমস্যার মধ্যে এই আন্দোলন আওয়ামী লীগের নতুন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এ অবস্থায় বিএনপিকে মোকাবেলা করে রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে এবার আওয়ামী লীগ কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করে, সেটি নিয়েই এখন মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগের নেতারা মুখে বলছেন, তারা বিএনপির আন্দোলনকে খুব একটা আমলে নিচ্ছেন না। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মতো আমজনতার ইস্যুকে বিএনপি এবার এজেন্ডা হিসেবে বেছে নিয়ে যেভাবে আন্দোলন এগিয়ে নিতে চাচ্ছে, সেটি ঠিকঠাক মোকাবেলা করতে না পারলে সরকার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, আন্দোলনের ইস্যু হিসেবে বিএনপি এবার এমন একটি বিষয়টিকে সামনে এনেছে, যেটি এদেশের সাধারণ মানুষের ইস্যু। কাজেই কৌশলে এই আন্দোলন মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হলে সরকার বেকায়দায় পড়তে পারে। আওয়ামী লীগ সরকারের গত তিন মেয়াদে বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলায় তারা শান্তি সমাবেশের পাশাপাশি কখনো কখনো পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থেকেছে, আবার কখনো মামলা দিয়ে বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মীদের দমন করেছে। পাল্টা-পাল্টি কর্মসূচি দেয়ার কারণে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন উত্তেজনা বাড়তে দেখা গেছে, তেমনি সহিংস ঘটনাও ঘটেছে। তবে বিরোধী মতের রাজনীতিবিদদের ওপর দমন-পীড়ন নিয়েও বিভিন্ন সময় পশ্চিমাদের কাছে প্রশ্নের মুখে পড়েতে আওয়ামী লীগ সরকার। এ অবস্থার মধ্যেই বিএনপি-বিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থবার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক,সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়ার জন্য ৫শ’ লোক নিয়েও বিএনপি আন্দোলন করতে পারেনি। তারা সঠিক পথে আইনি লড়াইও করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলন ও নির্বাচন বর্জনের ব্যর্থতার দায়ভার তো সরকার নেবে না। বিএনপি নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য বিভিন্ন ইস্যু খোঁজে। কবে কোন বছর, কোন ঈদের পর, কোন পরীক্ষার পর বিএনপির আন্দোলন তা জানতে চান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি আসলে আন্দোলনের সকল শক্তি সামর্থ্য সব হারিয়েছে। তিনি বলেন, নেতাকর্মীরা দলটির নেতৃত্বের ওপর হতাশ। তারেকের ওপর হতাশ। তাদের নেতা দেশে নেই, রিমোট কন্ট্রোলে আন্দোলন হবে? এটা কি সম্ভব! আন্দোলন করতে হলে রাজপথে এসে করতে হবে। রিমোট কন্ট্রোলের ডাকে জনগণ সাড়া দিবে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রহমান বলেন, আমরা বিএনপিকে আমলেই নিচ্ছি না, মোকাবেলা করা তো দূরের কথা। তিনি বলেন, তাদের এসব আন্দোলনের কথা বহুদিন ধরেই এদেশের মানুষ শুনতেছে। এটা নতুন কিছু না। আগেও তারা বহুবার এগুলো বলেছে, তারপর ব্যর্থ হয়ে ঘরে ফিরে গেছে। তিনি বলেন,জনগণের রায় নিয়েই আমরা সরকার গঠন করেছি। এটা মামার বাড়ির আবদার না যে বিএনপি চাইলেই সরকার পতন হয়ে যাবে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গত ষোল বছর ধরেই বিভিন্ন সময় সভা-সমাবেশ, রোড মার্চ-সহ নানান আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের আন্দোলনেও পার হয়েছে এক যুগেরও বেশি সময়। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি এখন ব্যর্থতার গ্লানিতে ডুবে রয়েছে। তাই দল রক্ষার জন্য, নেতৃত্ব রক্ষার জন্যই তারা গতানুগতিক এসব কর্মসূচি দিচ্ছে। আমরা এগুলোতে মোটেও চিন্তিত না।
শোভাযাত্রার ব্যাপক প্রস্তুতি: আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫ বছর পূর্তি উৎসব জমজমাট আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে আওয়ামী লীগে। এরই অংশ হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত শোভাযাত্রা বের করবে দলটি। এজন্য ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে প্রস্তুতি নিয়েছে। এ লক্ষ্যে ১৩জুন বৃহস্পতিবার বিকালে ২৩বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলীয় কার্যালয়ে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক যৌথ সভা করেছে দলটি। এতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশের সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানাবে দলটি। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হবে। দিনটি উপলক্ষে ২৩ জুন বিকেল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনা সভা ও শুরুতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর রবীন্দ্র সরোবরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, হাতিরঝিলে নৌকাবাইচ ও সাইকেল র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স